কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ –এর পরিচিতি
মোহাম্মদপুরে অবস্থিত তাজমহল রোডে অবস্থিত আজকের এই আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক সুবিধা সমৃদ্ধ বহুতল কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে একটি ইংরেজি মাধ্যম কিন্ডারগার্টেন স্কুল হিসাবে পথ চলা শুরু করে। প্রথমে প্রতিষ্ঠানটির নাম ছিল ‘ফাতেমা জিন্নাহ কিন্ডারগার্টেন’। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়; বিদ্যালয়টি তখন খুবই শোচনীয় অবস্থায় পতিত হয়। পরবর্তিতে এই এলাকার তৎকালীন চেয়ারম্যান জনাব আলহাজ্ব মোহাম্মদ চিনু মিয়া সাহেব অন্যান্য শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গের সহাযোগিতায় প্রতিষ্ঠানটিকে পুনঃর্নিমান করার উদ্যোগ নেন। তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রতিষ্ঠানটি একটি নতুন রূপ লাভ করে। এরপর ১৯৭২ সালে এটি ‘কিশলয় শিশুবাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামে নতুন যাত্রা শুরু করে। উচ্চ শিক্ষিত, জ্ঞানী, বুদ্ধিমান, এবং মিষ্টভাষী মিসেস কে. সাঈদ কিশলয় প্রতিষ্ঠানের প্রথম প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। তৎকালীন সময়ে এলাকায় কোন বালিকা বিদ্যালয় ছিল না। নারী শিক্ষা উন্নয়নের কথা চিন্তা করে স্থানীয় পৌর ওয়ার্ড চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ চিনু মিয়া এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের অনুপ্রেরণায় কিশলয়কে বালিকা বিদ্যালয় করার উদ্যোগ নেন। প্রধান শিক্ষিকা কে. সাঈদ -এর অক্লান্ত পরিশ্রমে ১৯৭৫ সনে সরকারের অনুমতিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়টিকে অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়। তখন প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয় ‘কিশলয় জুনিয়র বালিকা বিদ্যালয়’। শুরু হল এলাকায় নারী শিক্ষার প্রসার। থেমে নাই উন্নতির প্রক্রিয়া। উল্লিখিত ব্যক্তিবর্গের সুপ্রচেষ্টায় ১৯৭৭ সালে নবম শ্রেণী খোলার সরকারী অনুমতি পাওয়ায় নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘কিশলয় উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়’। ১৯৭৯ সালে প্রথম বারের মত এস.এস.সি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে কিশলয়ের ছাত্রীরা এবং ভালো ফলাফল করে। তারপর থেকে এটি কিশলয় নামের নিজস্ব পরিচয় পেয়েছিল। মিসেস সুফিয়া খাতুন প্রধান শিক্ষিকা হিসাবে ১৯৭৯ সালে যোগদান করে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানের উন্নতির জন্য তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন। ১৯৮৩ সালে বিদ্যালয় ভবনটি ছিল একটি 'টিনশেড' ঘর। তৎকালীন ওয়ার্ড কমিশনার ও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির চেয়ারম্যান জনাব আলহাজ্ব মোহাম্মদ চিনু মিয়া কমিটির অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে ১৯৭২ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য প্রচেষ্টা অব্যহত রাখেন। প্রতিষ্ঠানের বর্তমান বিদ্যালয় ভবন- ১ তাদের সেই সম্মিলিত প্রচেষ্টার নিদর্শন। এই ভবনটিতে বর্তমানে ১৩ টি শ্রেণিকক্ষ, ২ টি লাইব্রেরি, ৩ টি টিচার্স রুম, ১ টি সহকারী প্রধান শিক্ষক কক্ষ, ১টি সভা কক্ষ ও একটি নামাযের কক্ষ আছে।
আলহাজ্ব মকবুল হোসেন (সাবেক এমপি) তিনি ১৯৯৬ সালে এমপি (সংসদ সদস্য) নির্বাচিত হয়ে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির চেয়ারম্যান হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটিকে কলেজে উন্নীত করার উদ্যোগ গ্রহন করেন। আলহাজ্ব মকবুল হোসেন (সাবেক এমপি), মিসেস সুফিয়া খাতুন (প্রধান শিক্ষিকা) এবং কমিটির সম্মানিত সদস্যবৃন্দের উদ্যোগে ১৯৯৭ সালে এটি উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের কলেজ হিসাবে সরকারি অনুমোদন লাভ করে। তাঁদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠানে ৪ তলা বিদ্যালয় ভবন- ২ ও একটি সুন্দর গেইট নির্মাণ করা হয়।
কিশলয় -এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জনাব আলহাজ্ব মোঃ চিনু মিয়া সাহেবের সুযোগ্য সন্তান, ৪২ নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার, বর্তমান ২৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও এই প্রতিষ্ঠানের আজীবন দাতা জনাব আলহাজ্ব মোঃ সলিম উল্লাহ্ (সলু) বিগত প্রায় ১০ বছর যাবৎ প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগেও তিনি গভর্নিং বডির বিদ্যোৎসাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তাঁর ও গভর্নিং বডির সদস্যগণের নেতৃত্বে ও অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ্ -এর প্রচেষ্টায় এবং সাবেক স্থানীয় সংসদ সদস্য জনাব জাহাঙ্গীর কবির নানক সাহেবের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সরকারি অর্থায়নে ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠানের ৮ তলা কলেজ ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়; যা ২০১৯ সালে সমাপ্ত হয়েছে।
বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত সুবিধাসমূহ নিম্নরূপ:
প্রতিষ্ঠানের ভূমির পরিমাপ (অখন্ড ও পাকা সীমানা প্রাচীরবেষ্টিত):
ভবন : ৩০.০০ শতাংশ
খেলার মাঠ : ২৩.১৫ শতাংশ
ফাঁকা জায়গা : ১৩.৪৮ শতাংশ (ভবনের চতুর্পার্শস্থ)
বাগান : ০১.৫০ শতাংশ
সর্বমোট : ৬৮.১৩ শতাংশ (প্রতিষ্ঠানের নামে খারিজকৃত)
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ৪২ টি শ্রেণিকক্ষ, ২টি বিজ্ঞানাগার, ১টি ব্যাবহারিক ল্যাব, ২টি পাঠাগার, ২টি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, ২টি কম্পিউটার ল্যাব, ৩ টি শিক্ষক কক্ষ, ১ টি সহ. প্রধান শিক্ষক কক্ষ, ১ টি অধ্যক্ষের কক্ষ, ২টি অফিস কক্ষ, ২ টি হলরুম, ২টি নামাযঘর, ১ টি সভাকক্ষ, ১টি ক্যান্টিন, ৪০ টি টয়লেট রয়েছে। শিক্ষার্থীদের স্যানিটেশন বিষয়ে নিয়মিত সচেতন করা হয়। শিক্ষার্থীদের ফিল্টারে পরিশোধিত বিশুদ্ধ খাবার পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়। পাঠদানের জন্য সর্বোত্তম ও সর্বাধুনিক উপকরণ ব্যবহার করা হয়।
পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল:
পরীক্ষার নাম |
পাশের হার |
|
পরীক্ষার নাম |
পাশের হার |
পিইসি- ২০১৮ |
১০০% |
|
এসএসসি-২০১৮ |
৯৪.১২% |
জেএসসি-২০১৮ |
৯২.৮৬% |
|
এইচএসসি-২০১৮ |
৯৫.১৬% |
সরকারি এমপিওভুক্ত এই প্রতিষ্ঠানে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় এসএসসি ও এইচএসসি কোর্স চালু আছে। এছাড়াও এখানে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধীনে ৬ মাস (৩৬০ ঘন্টা) মেয়াদী কম্পিউটার অফিস এপ্লিকেশন কোর্স চালু আছে। প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষসহ ৫১ জন নিয়মিত নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারী কর্মরত আছেন এবং ১০ জন চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারী আছেন। প্রতিষ্ঠানে ১ম থেকে ১২শ শ্রেণি পর্যন্ত ১২০০ (প্রায়) ছাত্রী অধ্যয়ন করছে। দীর্ঘ সময়ের পরিক্রমায় বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মেয়র, এমপি, কমিশনার, কাউন্সিলর এবং অন্যান্য অনেক বিখ্যাত এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এই প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে দেশ জুড়ে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম বৃদ্ধি করেছেন। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল সব সময়ই ভাল। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুরুন্নাহার ডোরা ১৯৯৪ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ঢাকা বোর্ডের মধ্যে ১৮তম স্থান অর্জন করেন। প্রতিষ্ঠানটিতে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার প্রদান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিক্ষা সফর, বিজ্ঞান মেলা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, গণিত অলিম্পিয়াড সহ বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রম এবং সব ধরনের জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক দিন সমূহ যথাযথ মর্যাদায় পালন করা হয় এবং প্রতি বছর প্রায় অর্ধলক্ষাধিক টাকার বই পুরস্কার হিসেবে প্রদান করা হয়।
মো. রহমত উল্লাহ্, প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান অধ্যক্ষ, একজন জ্ঞানী এবং বিচক্ষন ব্যক্তিত্বের অধিকারী। একজন শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক, গল্প লেখক, কবি, বাংলাদেশ রেডিও ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিবন্ধিত গীতিকার, টিভি টক শোতে অংশগ্রহনকারী হিসেবে তিনি সারাদেশে সুপরিচিত। তিনি এই প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব সংগীত ও শপথবাক্য রচনা করেছেন। তিনি এই প্রতিষ্ঠানটিকে দেশের অন্যতম আধুনিক ও প্রখ্যাত করার জন্য কিছু ফলপ্রসূ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তিনি শিক্ষা কার্যক্রমকে আরও ফলপ্রসূ এবং আকর্ষণীয় করে তুলতে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও আধুনিক প্রযুক্তি ও পদ্ধতি ব্যবহার করার জন্য শিক্ষকদের অনুপ্রাণিত করে থাকেন। শিক্ষকদের নিজ নিজ বিষয়ের উপর যথাযথ প্রশিক্ষণ নিতে শিক্ষকদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন। তার সক্রিয় প্রচেষ্টায় সব শিক্ষক তাদের উজ্জ্বল এবং উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতার সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিয়ে শিক্ষন কার্যক্রমকে আরও উন্নত করে তুলেছেন। প্রতিষ্ঠানটি অধ্যক্ষ মহোদয়, শিক্ষক এবং পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের বিরামহীন অধ্যবসায় ও শ্রম দ্বারা খুব অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বিশিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে আশা করা যায়।